হাতে-কলমে ইলেকট্রনিক্স শেখার জন্য প্রথম টিউটোরিয়ালে আপনাকে স্বাগতম । এই টিউটোরিয়ালে ইলেকট্রনিক্স এর জগতে নতুন শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সহজ প্রজেক্ট তৈরি করা হয়েছে এবং এই প্রজেক্ট এ একটি এলইডি লাইট কে জানানোর জন্য যে সকল পদ্ধতি ব্যবহার করতে হয় সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে ।
এই প্রজেক্টটি তৈরি করার মাধ্যমে আমরা শুধুমাত্র একটি লাইট কে জ্বলতেই দেখব তা নয়, বরং এর মাধ্যমে আমরা ইলেকট্রনিক্স সার্কিট এর পেছনে বিভিন্ন থিওরি সম্পর্কে জানতে এবং বুঝতে পারবো এবং এটি আমাদের ইলেকট্রনিক শেখার যাত্রার প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে বিবেচিত হবে । এই প্রজেক্টটি তৈরি করার জন্য ইলেকট্রনিক্স এর কোন বিষয় সম্পর্কে আগে থেকে কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকার প্রয়োজন নেই, বরং আপনার আগ্রহ এবং কৌতূহল এই প্রজেক্টটি নির্মাণ এবং শেখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে ।
প্রয়োজনীয় উপকরণ
ইলেকট্রনিক্স এর এই প্রজেক্ট তৈরি করার জন্য নিম্নলিখিত উপকরণসমূহ প্রয়োজন হবে
এলইডি লাইট একটি
ব্রেড বোর্ড একটি
মেল টু মেল জাম্পার তার দুইটি
রেজিস্টর 220 একটি
৯ ভোল্ট ব্যাটারি পাওয়ার সোর্স (ব্যাটারি না থাকলে ইউএসবি পাওয়ার সোর্স ব্যবহার করা যেতে পারে)
এল ই ডি
জাম্পার তার
ব্যাটারি
রেজিষ্টর
ব্রেডবোর্ড
কাজ ১ - এলইডি সম্পর্কে জানা
এই প্রজেক্টটি নির্মাণ করার জন্য প্রাথমিকভাবে আমাদের প্রজেক্টের উপকরণসমূহ কে জানতে হবে এবং এই প্রজেক্ট এর একটি অন্যতম উপকরণ হচ্ছে এলইডি । আমরা যদি এলইডি কম্পনেন্ট কে লক্ষ্য করি , তবে দেখতে পাবো যে এটি বিভিন্ন রং এর হতে পারে । সাথে সাথে এলইডি এর আকার ও পরিবর্তন থাকতে পারে । আমরা এই টিউটোরিয়ালে যে রং এবং আকারের এলইডি ব্যবহার করেছি, আপনার এলইডি এর রং এবং আকার ভিন্ন হতে পারে । এ বিষয় নিয়ে তেমন চিন্তিত হবার কোন কারণ নেই । আমরা যদি এই এলইডিকে আরো বিস্তারিত ভাবে পর্যবেক্ষণ করি তবে দেখতে পাবো যে এদের একটি পা বড় এবং আরেকটি পা ছোট । ইলেকট্রনিক্স এর থিওরি অনুসারে এই বড় পা কে বলা হয় অ্যানোড এবং ছোট পা কে বলা হয় ক্যাথোড। বোঝার সুবিধার্থে এখন আমাদের এই বিষয়টি খুব জটিল ভাবে চিন্তা করার প্রয়োজন নেই । আমাদের শুধু জানতে হবে যে বড় পা হচ্ছে পজেটিভ এবং ছোট পা করছে নেগেটিভ । শেখার জন্য আমরা এখন শুধু এটুকু জানবো যে, এই এলইডি লাইটে বড় পা দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবেশ করবে এবং ছোট পা দিয়ে বিদ্যুৎ বেরিয়ে যাবে । এজন্য ব্যাটারীতে যে অংশে পজিটিভ (+) চিহ্ন আছে সেটিকে এলইডি লাইট এর বড় পা বা পজেটিভ বা এর সাথে সংযুক্ত করতে হবে এবং ছোট পা কে ব্যাটারির (-) নেগেটিভ চিহ্ন যুক্ত পা এর সাথে সংযুক্ত করতে হবে । যদি আমরা এই কন্ডিশন পূরণ করতে পারি তবে এই এলইডি লাইট জ্বলে উঠবে।
এল ই ডি
এল ই ডি এর পোলারিটি
আমরা এখানে যে পজিটিভ এবং নেগেটিভ বা সম্পর্কে জানলাম সেটিকে ইলেকট্রনিক্স এর ভাষায় পোলারিটি বলা হয় । এর মাধ্যমে কোন একটি ইলেকট্রনিক্স কম্পনেন্ট এর মধ্য কোন দিক দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবেশ করবে এবং কোন দিক দিয়ে বিদ্যুৎ বের হয়ে যাবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা প্রদান করা হয়। সার্কিট নির্মাণ করার জন্য এই বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ । কারণ যদি ভুল পোলারিটিতে সার্কিট তৈরি করা হয়, তবে এটি কাজ করবে না বা এমন কি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যেমন আমরা যদি আমাদের এলইডি কম্পনেন্ট এর ছোট পায়ের সাথে ব্যাটারির পজেটিভ দিক এবং বড় পায়ের সাথে ব্যাটারির নেগেটিভ সংযুক্ত করি; মানে ভুল পোলারিটি তে ব্যাটারির সাথে এলইডি সংযুক্ত করি , তবে এটি পূড়ে যেতে পারে বা নষ্ট হয়ে যেতে পারে । এজন্য অবশ্যই যে কোন কম্পনেন্ট ব্যবহার করার পূর্বে, প্রথমে সেই উপকরণ এর পোলারিটি সম্পর্কে সঠিক ধারণা দিতে হবে ।
ব্রেডবোর্ড সম্পর্কে জানা
ব্রেড বোর্ড নামক উপকরণকে ব্যবহার করার জন্য একে অবশ্যই সমান স্থানে বসাতে হবে । পর্যবেক্ষণ করে দেখা যাবে যে এর মধ্য অসংখ্য ছিদ্র আছে এবং এই ছিদ্রগুলো সারিবদ্ধভাবে থাকে । উপকরণকে সংযুক্ত করার জন্য , সেগুলোকে এর পিনকে এসব ছিদ্র এর মধ্যে ঢোকাতে হবে । এসব ছিদ্রগুলো নিচে চিত্র এর মত সংযুক্ত থাকে ।
ব্রেডবোর্ড
কাজ ১ - সার্কিট নির্মাণ
বোর্ডকে ব্যবহার করার জন্য এবং সার্কিট নির্মাণ করার জন্য প্রথমে এলইডি এর বড় পিনকে ব্রেড বোর্ডের একটি ছিদ্র এর মধ্য প্রবেশ করাই । এরপর এলইডি এর ছোট আরেকটি পিনকে গ্রেড বোর্ড এর সারি এর ছিদ্র এর মধ্য প্রবেশ করাই
আমাদের কাছে যে ২২০ ওহমের একটি রেজিস্টার আছে তার একটি পা ব্রেড বোর্ড এর যে সারিতে এলইডি এর ছোট পিন আছে সেই সারিতে প্রবেশ করায় । এবং রেজিস্টরের অন্য পা রেডবোর্ড এর অন্য সারিতে প্রবেশ করাই ।
এরপরে জাম্পার এর তার ব্যবহার করার মাধ্যমে এলইডি এর বড় পা এর সারিতে জাম্পার ওয়্যার প্রবেশ করাই এবং জাম্পার ওয়ার এর অপর প্রান্ত ব্রেড বোর্ড এর পজিটিভ বা লাল রং এর পাওয়ার রেল এ প্রবেশ করাই। অন্যদিকে রেজিস্টর এর ওপর পা কে, ব্রেড বোর্ড এর নীল রং এর সার বা নেগেটিভ রেল এ প্রবেশ করায়।
এরপর সার্কিটকে চালু করার জন্য ডবোর্ড এর লাল রং এর পজিটিভ রেল এর সাথে ব্যাটারির পজিটিভ প্রান্ত সংযুক্ত করি এবং রেডবোর্ড এর নীল রেল এর সাথে ব্যাটারির নীল প্রান্ত সংযুক্ত করি।
যদি সকল কাজ ঠিকমত করা হয় তবে ব্যাটারি বা usb পাওয়ার সোর্স চালু করি এবং আমরা এলইডি লাইটকে সফলভাবে চলতে দেখব। এলইডি লাইট এর আলোকে আমরা লক্ষ্য করি এবং আমরা বুঝতে পারবো যে ব্যাটারি থেকে ইলেকট্রন সমূহ এই এলইডি কম্পনেন্ট এর ভেতর দিয়ে চলার কারণে সেখান থেকে আলো তৈরি হচ্ছে ।
বেসিক এল ই ডি সার্কিট সেটআপ
বেসিক এল ই ডি সার্কিট ডায়াগ্রাম
সার্কিট কিভাবে কাজ করে
মূলত ব্যাটারি থেকে ইলেকট্রন সমূহ তারের মাধ্যমে এলইডি এর পজেটিভ বা বড় পা এর মধ্য প্রবেশ করছে এবং সেটি আলো আকারে এলইডি কম্পনেন্ট থেকে বিচ্ছুরিত হচ্ছে। ব্যাটারি থেকে অতিরিক্ত যে ইলেকট্রন আসছে সেটি এলইডি এর নেগেটিভ বা ছোট পা এর ভেতর দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে । পরবর্তীতে সেটি জাম্পার তারের মধ্য দিয়ে পুনরায় ব্যাটারিতে ফেরত যাচ্ছে । তবে এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে রেজিস্টর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে । কারণ ব্যাটারি থেকে যে পরিমাণে ইলেকট্রন , এলইডি কম্পনেন্ট এর মধ্য প্রবেশ করতে চাচ্ছে তা অনেক বেশি এবং এটি এলইডি নামক কম্পোনেন্ট কে পুড়িয়ে দিতে পারে । এজন্য রেজিস্টর ব্যবহার করার মাধ্যমে এলইডি কম্পনেন্ট এর মধ্য ইলেকট্রন এর প্রবাহ কমিয়ে দেয়া হচ্ছে এবং এটি নিরাপদ ভাবে এলইডি উপকরণকে জ্বলতে সাহায্য করছে । এই সাধারন সার্কিটটি ব্যবহার করে আমরা বিদ্যুৎ প্রবাহ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা লাভ করতে পারি এবং কিভাবে একটি সার্কিট নির্মাণ করতে হয় এবং সার্কিট নির্মাণ করার সময় থিওরি বিষয়গুলো কিভাবে কাজ করে থাকে , সে সম্পর্কে বুঝতে পারি
ইলেকট্রনিক শেখার জন্য এটি আমাদের প্রাথমিক পদক্ষেপ এবং আপনার কাছে যদি আরও বিভিন্ন মানের রেজিস্টর থাকে বা বিভিন্ন রং এর এলইডি থাকে তবে সেগুলোকে ব্যবহার করার মাধ্যমে আপনি আরো নানারকম পরীক্ষা করতে পারেন । এজন্য ব্রেড বোর্ড থেকে এলইডি বা রেজিষ্টর কে উঠিয়ে নতুন মান বা রং এর রেজিস্টর ও এলইডি দ্বারা প্রতিস্থাপন করে , পরীক্ষা করতে পারেন। আরো বিস্তারিতভাবে রেজিস্টর এর সাথে LED এর সম্পর্ক এবং বিদ্যুৎ প্রবাহ সম্পর্কে সাহায্য করবে। পরবর্তী টিউটোরিয়ালে আমরা ইলেকট্রনিক সার্কিট নির্মাণ এর বেসিক বিষয় সমূহ সম্পর্কে আলোচনা করব । আমাদের সাথে সংযুক্ত থাকুন
এই টিউটোরিয়াল সমূহ হাতে-কলমে ইলেকট্রনিক্স শিখি বই এর একটি অংশ। আপনি যদি এই টিউটোরিয়াল গুলো পছন্দ করে থাকেন এবং ইলেকট্রনিক্স সম্পর্কিত বিষয়গুলোকে সহজে হাতে-কলমে শেখার জন্য আরও সিরিয়াস মটিভেশন অনুভব পোষণ করেন , তবে অবশ্যই এই বইটি আপনাকে গুরুত্বপূর্ণভাবে সহযোগিতা করবে । এই বইয়ের সাথে ইলেকট্রনিক্স এর থিওরি এবং হাতে কলমে বিষয় শেখার জন্য বিস্তারিত বিবরণ প্রদান করা হয়েছে । এই বইটা কিভাবে ইলেকট্রনিক প্রজেক্ট ডিজাইন করা যায়, কিভাবে বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করা যায় , সে সম্পর্কে বিস্তারিত নির্দেশনা ধারাবাহিকভাবে দেখানো হয়েছে । অন্যদিকে এই বইয়ের সাথে ইলেকট্রনিক্স উপকরণসমূহ সংযুক্ত আছে ।
এর ফলে বইতে শেখা বিষয় সমূহ ব্যবহার করে সফটওয়্যার এর সার্কিট ডিজাইন করতে পারবেন এবং পরবর্তীতে বইয়ের সাথে যুক্ত উপকরণ সমূহ ব্যবহার করে বাস্তবিক প্রজেক্ট তৈরি করতে পারবেন । এর ফলে ইলেকট্রনিক শেখার জন্য একজন পাঠক সমন্বিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে পারবেন এবং থিওরি ও প্র্যাকটিক্যাল জ্ঞান এর সমন্বয় ঘটনার মাধ্যমে সহজে ইলেকট্রনিক সেখার কার্যক্রম সম্পাদন করতে পারবেন । এর ফলে এই বইটি ব্যবহার করার মাধ্যমে ছাত্ররা সহজে তাদের ক্লাসের ইলেকট্রনিক সম্পর্কিত থিওরি গুলো বুঝতে পারবে এবং সেগুলোর বাস্তব প্রয়োগ সম্পর্কে বিস্তারিত প্র্যাকটিক্যাল ধারণা অর্জন করতে পারবে । অন্যদিকে এই বইটি ব্যবহার করার মাধ্যমে ইলেকট্রনিক্স এর সাথে সম্পর্কিত টেকনিশিয়ান এবং প্রফেশনাল ব্যক্তিরা তাদের ব্যবহারই কাজগুলো কিভাবে সম্পাদিত হয় সে সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারবেন এবং এগুলো তাদেরকে আরো ভালোভাবে সমস্যাগুলো সমাধান করা এবং নতুন কাজের স্কোপ তৈরি করতে সাহায্য করবে । সাথে সাথে ইলেকট্রনিক বিষয়ের প্রতি আগ্রহী হবিষ্ট রা এই বইটি ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের নতুন প্রজেক্ট ডিজাইন এবং সেগুলো নির্মাণ করার সক্ষমতা অর্জন করবেন এবং এগুলো তাদের ইলেকট্রনিক্স শেখার যাত্রাকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবে প্রভাবিত করবে