টিউটোরিয়াল নাম্বার তিন তে স্বাগতম । এই টিউটোরিয়ালে আমরা ইলেকট্রনিক্স এর সার্কিট নির্মাণ করার জন্য বহুল ব্যবহৃত দুটি উপকরণ, যেগুলো রেজিস্টর এবং ক্যাপাসিটর নামে পরিচিত, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করব । এজন্য আমরা রেজিস্টর এবং ক্যাপাসিটর ব্যবহার করে কয়েকটি সার্কিট নির্মাণ করব এবং এর মাধ্যমে রেজিস্টার এবং ক্যাপাসিটর এর সাথে সম্পর্কিত যে সকল থিওরি সমূহ আছে সেগুলো এর প্রয়োগ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা লাভ করতে পারব।
উপকরন সমূহ
এই টিউটোরিয়ালে প্রদর্শিত সার্কিট গুলো নির্মাণ করার জন্য আমাদের নিম্নলিখিত উপকরণগুলো প্রয়োজন হবে
ব্রেড বোর্ড
জাম্পার তার
এলইডি
বিভিন্ন মানের রেজিস্টার
বিভিন্ন মানের ক্যাপাসিটর
পাওয়ার সাপ্লাই
মাল্টিমিটার ( যদি থাকে তবে ভালো)
এল ই ডি
জাম্পার তার
ব্যাটারি
রেজিষ্টর
ব্রেডবোর্ড
ক্যাপাসিটর
রেজিষ্টর সর্ম্পকে জানি
রেজিটেন্স হচ্ছে সার্কিটে বিদ্যুত চলাচল করতে বাধা দেয়া। আমরা জেনেছি, ইলেকট্রন সমূহ চলার সময় তারের দেয়ালে ঘষা খেয়ে বাধা প্রাপ্ত হয়। কোন পর্দাথের ভিতরে ইলেকট্রন কতখানি বাধাপ্রাপ্ত হয় তা হচ্ছে রেজিটেন্স। রেজিটেন্সকে R দ্বারা প্রকাশ করা হয়। সার্কিটে কতখানি রেজিটেন্স হবে তা একটি সূত্রের সাহায্য প্রকাশ করা যায়। একে বলা হয় ওহমের সূত্র। ওহমের সূত্র বলে,
রেজিটেন্স = ভোল্টেজ / কারেন্ট
R = V / I
রেজিস্টর যেহেতু বিপুল পরিমানে অনেকগুলো একসাথে বানানো হয়, তাই রেজিস্টর এর মান সবসময় ঠিক থাকেনা। কিন্তু এটা বড় কোন সমস্যা নয়। কারণ অধিকাংশ সার্কিটে রেজিস্টরের সঠিক মান প্রয়োজন হয় না। সেইজন্য রেজিস্টর এ নমিনাল মান দেয়া থাকে। যদি রেজিস্টর মান ১০০ হয় ও নমিনাল মান ১০% হয়, তাহলে রেজিস্টর মান (১০০ - ১০) = ৯০ থেকে (১০০ + ১০) = ১১০ এর মধ্য হয়। রেজিস্টরের উপর পাওয়ার রেটিং থাকে যেটা বলে দেয়, রেজিস্টরের ভিতর দিয়ে কতখানি বিদ্যুৎ প্রবাহিত করলে রেজিস্টরের কোন ক্ষতি হবেনা। রেজিস্টরের বয়স বাড়লে বা তাপমাত্রা বাড়লে তার মান পরিবর্তন হয়, এটা মাথায় রাখা প্রয়োজন ।
রেজিষ্টর কালার কোড
লক্ষ্য করলে দেখা যাবে রেজিস্টরের উপর অনেকগুলো বিভিন্ন রংয়ের দাগ আছে। এই দাগগুলোকে রেজিস্টরের কালার কোডিং বলা হয়। এই দাগের সাহায্যে রেজিস্টরের মান নির্নয় করা হয়। বিভিন্ন কালার বিভিন্ন মান প্রকাশ করে। যে পাশে লাইন বেশি কোনায় সেই পাশ থেকে পড়া শুরু করতে হবে। নিচে রেজিস্টরের কালার কোডের চার্ট দেয়া হলো।
রেজিস্টরের উপর কোনা থেকে প্রথম লাইন, প্রথম সংখ্যা প্রকাশ করে। দ্বিতীয় লাইন দ্বিতীয় সংখ্যা প্রকাশ করে। তৃতীয় ও চতূর্থ লাইন প্রকাশ করে, প্রথম ও দ্বিতীয় দুই সংখ্যার পর কতগুলো শুন্য বসবে। মাঝে মাঝে, একদম শেষে একটি লাইন থাকে, যা রেজিস্টরের নমিনাল মান প্রকাশ করে। যদি এই লাইন না থাকে তবে নমিনাল মান ১২০%।
রেজিষ্টর এর মান নির্নয়
এখন আমরা জানবো কিভাবে রেজিস্টর এর মান নির্ণয় করতে হয় । রেজিস্টর এর মান নির্ণয় করার জন্য সরাসরি ভিজুয়াল পদ্ধতি বা চোখে দেখে মান নির্ণয় করা যায় । আবার মাল্টিমিটার এর সাহায্যে রেজিস্টর এর মান নির্ণয় করা যায় । প্রথমে ভিজুয়াল পদ্ধতি বা চোখে দেখে রেজিস্টর এর মান নির্ণয় করার জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করি ।
একটি রেজিষ্টর নেই এবং এটিকে আলোতে রাখি যেন রেজিষ্টরের উপরের লাইনগুলো পরিষ্কারভাবে দেখা যায়।
যে পাশের লাইনটি বেশি মোটা সেই পাশ থেকে পড়া শুরু করি।
প্রথম কালারটি দেখি এবং উপরের চার্ট থেকে সেই কালারের মান বের করে কাগজে লিখি।
এরপর দ্বিতীয় কালার দেখি এবং চার্ট থেকে সেই কালারের মান বের করে প্রথম সংখ্যার ডানপাশে লিখি।
এভাবে তৃতীয় কালারের মান দেখি এবং একে প্রথম দুটি সংখ্যার ডানপাশে লিখি।
এরপর চতুর্থ কালারের মান দেখি এবং প্রথম তিন সংখ্যার পর প্রয়োজনীয় শুন্য বসাই।
এভাবে যে সংখ্যাটি পাওয়া যাবে তা হবে রেজিষ্টরের মান।
এই একই পদ্ধতি ব্যবহার করে বাকী রেজিষ্টরের মান নির্নয় করি।
মাল্টিমিটার ব্যবহার করার মাধ্যমে কিভাবে রেজিস্টর এর মান নির্ণয় করা যায় সেটি বোঝার জন্য আমাদের প্রথমে মাল্টিমিটার এর ব্যবহার সম্পর্কে জানতে হবে ।
রেজিষ্টর কালার ব্যান্ড
মাল্টিমিটারের ব্যবহার
বিভিন্ন ধরনের সার্কিট নির্মাণ করার জন্য বা সার্কিট এর মধ্য যদি কোন সমস্যা হয় সেগুলো খুঁজে বের করার জন্য মাল্টিমিটার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ । যদি আপনি সিরিয়াসলি ইলেক্ট্রনিক শেখার বিষয়ে আগ্রহী হন, তবে মাল্টিমিটার নামক টুলস টি আপনাকে গুরুত্বপূর্ণভাবে সহযোগিতা করবে । ইলেকট্রনিক্স সার্কিট এর বিভিন্ন মান মাপার জন্য যে মিটার ব্যবহার করা হয়, তাকে মূলত মাল্টিমিটার বলা হয়। এই মিটারকে মাল্টিমিটার বলার কারণ হচ্ছে এর সাথে অনেকগুলো মিটার সংযুক্ত থাকে এবং বিভিন্ন মিটার বিভিন্ন সব ধরনের রিডিং প্রদর্শন করে । সাধারনত কারেন্ট মাপার জন্য এমিটার ব্যবহার করা হয়। এজন্য আমরা যদি সার্কিট এর ভিতরের কোন অংশের কারেন্ট এর পরিমান মাপতে চাই, তবে মাল্টিমিটার এর এমিটার অংশটি ব্যবহার করতে হবে । আবার ভোল্টেজ মাপার জন্য ভোল্টমিটার ব্যবহার করা হয় এবং সার্কিট এর অভ্যন্তরে কোন কম্পনেন্ট এর ভোল্টেজ কত, সেটি মাপার জন্য ভোল্ট মিটার ব্যবহার করতে হবে । আবার রেজিটেন্স মাপার জন্য ওহম মিটার ব্যবহার করা হয়। মাল্টিমিটারে এই সবগুলি মিটার একসাথে সন্নিবেশিত থাকে। এছাড়াও আরও কিছু অতিরিক্ত মিটার, মাল্টিমিটারের সংযুক্ত থাকতে পারে। যেমন ক্যাপাসিটেন্স মাপার মিটার, ট্রানজিস্টর এর গেইন মাপার মিটার ইত্যাদি।
মাল্টিমিটারের ব্যবহার
নিচে একটি ডিজিটাল মাল্টিমিটার এর ছবি দেখানো হয়েছে । ডিজিটাল মাল্টিমিটার বিভিন্ন আকারের বা ডিজাইনের হতে পারে। তবে সব মাল্টিমিটারে সাধারণত কিছু বিশেষ উপকরণ থাকে । সব মাল্টিমিটারে লাল এবং কালো রং এর দুটি প্রোব (probe) থাকে । এদের মত red প্রোব পজিটিভ এবং black প্রোব নেগেটিভ অংশে স্থাপন করার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে । এছাড়াও ডিজিটাল মাল্টিমিটার এর একটি সিলেকশন সুইচ থাকে এবং এর মাধ্যমে আমরা মিটারের কোন অংশ ব্যবহার করব সে সম্পর্কে সিলেকশন করতে পারি । এছাড়াও মিটারের একটি ডিসপ্লে থাকে যেখানে বিভিন্ন মান প্রদর্শন করা হয়ে থাকে ।
ডিজিটাল মাল্টিমিটার কে বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হয়। যেমন আমরা যদি সার্কিটের কোন অংশে যেমন রেজিষ্টর এর ভোল্টেজ মাপতে চাই, তবে মিটারকে সার্কিটের সাথে নিচের চিত্রের মতো স্থাপন করতে হবে। এবং সাথে সাথে মিটার এর সিলেকশন সুইচ নিচের চিত্রের মত অবস্থানে রাখতে হবে । যদি সব ঠিক থাকে তবে মিটারটি নিচের মতো ভোল্টেজ এর মান প্রদর্শন করবে
আবার একইভাবে আমরা যদি রেজিস্টর এর মান কত ওহম সেটি জানতে চাই , তবে মাল্টিমিটারের সিলেকশন সুইচ নিচের মত অবস্থানে রাখতে হবে । এরপর মিটার এর প্রোব গুলোকে নিচের চিত্রের মতো অবস্থানে স্থাপন করলে , ডিসপ্লেতে রেজিস্টর এর মান প্রদর্শন করবে ।
সিরিজ এবং প্যারালাল রেজিষ্টর
ইতিপূর্বে টিউটোরিয়ালে আমরা সিরিজ এবং প্যারালাল সার্কিট সম্পর্কে জেনেছি এবং সিরিজ এবং প্যারালাল সার্কিট কিভাবে নির্মাণ করতে হয় সে সম্পর্কে হাতে-কলমে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি । আগের টিউটোরিয়াল এ এল ই ডি গুলোকে আমরা যেভাবে স্থাপন করেছি। একইভাবে রেজিস্টার গুলোকে স্থাপন করতে পারি এবং রেজিস্টর ব্যবহার করে সিরিজ এবং প্যারালাল সার্কিট নির্মাণ করতে পারি । রেজিস্টর গুলোকে সিরিজে স্থাপন করার জন্য , নিচের চিত্র এর মত রেজিস্টর গুলোকে সংযুক্ত করি
কোন সার্কিটকে সিরিজ সার্কিট বলা হয়, যখন সার্কিটের উপকরন সমূহ সিরিজে সংযুক্ত থাকে। সার্কিটে উপকরন সমূহ যদি সিরিজে থাকে, তবে এর প্রতিটি পার্টসে কারেন্টের পরিমান একই হবে, কিন্তু ভোল্টেজের পরিমান ভিন্ন হবে। যদি কয়েকটি রেজিষ্টর সিরিজে থাকে তবে তাদের জন্য রেজিষ্টান্স এর মান হবে,
R = R1 + R2 + R3 + ...... + Rn
নিচের সার্কিট ডায়াগ্রামে তিনটি রেজিষ্টর সংযুক্ত আছে। এদের মান যথাক্রমে ২,৩,৪ ওহম। তাদের সর্বমোট রেজিটেন্স হবে।
R = R1 + R2 + R3
R = ২ + ৩ + ৪ = ৯ ওহম
সিরিজ রেজিষ্টরের মান নির্নয়
সিরিজ সার্কিট এর মত রেজিস্টর ব্যবহার করে আমরা প্যারা। সার্কিট নির্মাণ করতে পারি । কোন সার্কিটকে প্যারালাল সার্কিট বলা হবে, যদি সার্কিটের উপকরন সমূহ প্যারালালী সংযুক্ত থাকে। সার্কিটে উপকরন সমূহ যদি প্যারালালী থাকে তবে এর প্রতিটি পার্টসে কারেন্ট ভিন্ন হবে কিন্তু ভোল্টেজ একই হবে।
যদি কয়েকটি রেজিষ্টর প্যারা। থাকে তবে তাদের জন্য রেজিষ্টান্স এর মান হবে,
1/R = 1/R1 + 1/R2 + 1/R3 + + 1/Rn
নিচের সার্কিট ডায়াগ্রামে তিনটি রেজিষ্টর প্যারালাল্লী সংযুক্ত আছে। এদের মান যথাক্রমে ২,৩,৪ ওহম। তাদের সর্বমোট রেজিটেন্স হবে
1/R = ½ + ⅓ + ¼ = 13/12
R = 12/13 ওহম
ক্যাপাসিটর সার্কিট নির্মান
রেজিস্টর এরপরে অন্য যে উপকরণ ইলেকট্রনিক্স সার্কিট নির্মাণ করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে , সেটি হচ্ছে ক্যাপাসিটর । আমরা এখন ক্যাপাসিটর ব্যবহার করে একটি ছোট সার্কিট নির্মাণ করবো এবং ক্যাপাসিটর কিভাবে কাজ করে থাকে সে সম্পর্কে ধারণা লাভ করব । ক্যাপাসিটর ব্যবহার করে সার্কিট নির্মাণ করার জন্য আমরা সিম্যুলেশন সফট্বয়ার ব্যবহার করবো
প্রথমে ব্রেডবোর্ড এর মধ্যে একটি এলইডি প্রবেশ করায় এবং আগের মতোই এলইডি এর পজেটিভ প্রান্ত একটি সারিতে এবং নেগেটিভ প্রান্ত অন্য একটি সারিতে প্রবেশ করায়
এরপর একটি ২২০ ওহম রেজিস্টর কে এলইডি এর পজিটিভ প্রান্ত এর সাথে সংযুক্ত করি ।
এরপর ১০ মাইক্রো ফ্যারাড মানের একটি ক্যাপাসিটর নেই । এখানে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে এলইডি এর মত ক্যাপাসিটর এর সাথেও একটি পা বড় এবং আরেকটি পা ছোট আছে । সাথে সাথে বড় পা এর পাশে একটি তীর চিহ্ন আছে । এখানে ক্যাপাসিটর এর বড় পা দ্বারা পজেটিভ বা অ্যানোড দেখানো হয়েছে এবং ছোট পা দ্বারা নেগেটিভ বা ক্যাথোড দেখানো হয়েছে । এই ধরনের ক্যাপাসিটর কে বলা হয় ইলেকট্রোলাইট ক্যাপাসিটর এবং এগুলো এর মধ্য পোলারিটি থাকে । এর মানে এই সকল ক্যাপাসিটর কে সার্কিটে সঠিকভাবে সংযুক্ত করতে হবে। অর্থাৎ এই সকল ক্যাপাসিটর এর পজিটিভ প্রান্ত সার্কিটের পজিটিভ সোর্স এর সাথে এবং নেগেটিভ প্রান্ত নেগেটিভ সোর্স এর সাথে সংযুক্ত করতে হবে । যদি এই সকল ক্যাপাসিটর ভুলভাবে সংযুক্ত করা হয় তবে এগুলো নষ্ট হয়ে যেতে পারে বা অনেক ক্ষেত্রে এটি বিস্ফোরিত হতে পারে ।
ক্যাপাসিটর পিন
এই ক্যাপাসিটর এর পজেটিভ প্রান্ত রেজিস্টর এর খোলা প্রান্ত এর সাথে সংযুক্ত করি এবং নেগেটিভ প্রান্ত, এলইডি এর নেগেটিভ প্রান্ত এর সাথে সংযুক্ত করি ।
এরপর নিচের চিত্রের মত সার্কিটে ব্যাটারি পাওয়ার সোর্স সংযুক্ত করি ।
সার্কিটের সকল অংশের কানেকশন চেক করি এবং সবকিছু ঠিক থাকলে এলইডিটি জ্বলতে শুরু করবে
এরপর নিচের চিত্র এর মত সার্কিট থেকে পাওয়ার সোর্স খুলে ফেলি । এখন আমরা দেখতে পাবো যে পাওয়ার সোর্স খুলে ফেলার পরেও এলইডিটি কিছু সময়ের জন্য জ্বলে থাকছে । এরপর এই এলইডি আস্তে আস্তে নিভে যাবে ।
এভাবে পুনরায় সার্কিটে পাওয়ার সোর্স যুক্ত করতে এবং খুলে ফেলে এলইডি এর জ্বালা-নিভার পর্যবেক্ষণ করি
ক্যাপাসিটর কিভাবে কাজ করে
ক্যাপাসিটর কি? ক্যাপাসিটর, বিদ্যুৎ ধারণ করতে পারে এমন ছোট একটা ইলেকট্রনিক্স পার্টস। এর কাজ অনেকটা ব্যাটারীর মতো। ব্যাটারীর সাথে ক্যাপাসিটরের পার্থক্য হচ্ছে, ব্যাটারী বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। বিদ্যুৎ সরবরাহ করবার ক্ষমতা শেষ হয়ে গেলে, ব্যাটারী শেষ হয়ে যায়। অন্যদিকে, ক্যাপাসিটরের সাথে যখন ব্যাটারী সংযোগ দেয়া হয়, ক্যাপাসিটর চার্জ জমাতে থাকে। যখন ক্যাপাসিটর থেকে ব্যাটারী সরিয়ে নেয়া হয়, তখন ক্যাপাসিটর বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করে। এজন্য আমরা যখন সার্কিটে ব্যাটারি থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছি তখন ক্যাপাসিটর চার্জ সংগ্রহ করতে শুরু করেছে । এরপর আমরা যখন ক্যাপাসিটর থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ খুলে দিয়েছি তখন ক্যাপাসিটর তার চার্জ এলইডিতে সরবরাহ করতে শুরু করেছে । এর ফলে ব্যাটারি খুলে ফেলার পরও ক্যাপাসিটর থেকে প্রাপ্ত চার্জ ব্যবহার করে এলইডি টি কিছু সময় চলতে পারছে ।
ক্যাপাসিটর কতক্ষণ ও কতখানি বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে তা নির্ভর করবে ক্যাপাসিটরের মান ও গঠনের উপর। ক্যাপাসিটরের মান মাপার একক ফ্যারাডে। ফ্যারাডের ক্ষুদ্র একক মাইক্রো ফ্যারা্ডে মিলি ফ্যারাডে বা পিকো ফ্যারাডে ইত্যাদি।
ক্যাপাসিটরের ভিতরে দুটি প্যারা। প্লেট থাকে। এই প্লেট দুটির সাথে একটি ভোল্টেজ সোর্স সংযুক্ত করা হলে, একটি প্লেটে চার্জ জমা হতে থাকে। ক্যাপাসিটর কতখানি চার্জ জমা করতে পারে, তার উপর ক্যাপাসিটরের মান নির্ভর করে। একে বলা হয় ক্যাপাসিটেন্স, যাকে ইংরেজী অক্ষর C দিয়ে প্রকাশ করা হয়।
C = Q / V
এখানে,
C = ক্যাপাসিটেন্স
Q = চার্জ
V =ভোল্টেজ
ক্যাপাসিটেন্সের একক হচ্ছে ফ্যারাডে।
এই টিউটোরিয়াল এ রেজিস্টর এবং ক্যাপাসিটর এর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করা হয়েছে এবং এগুলো কিভাবে সার্কিটে বিদ্যুতের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে কাজ করে থাকে সে সম্পর্কে বিস্তারিত পর্যালোচনা করা হয়েছে । এর মাধ্যমে আমরা এই সকল উপকরণসমূহ ব্যবহার করার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের সার্কিট ডিজাইন এবং নির্মাণ করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি । সাথে সাথে সার্কিটে এই উপকরণগুলো কেন ব্যবহার করা হয়েছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা লাভ করতে পারি । ইলেকট্রনিক্স শিক্ষা গ্রহন করা এবং ইলেকট্রনিক্স বেসিক জানার জন্য এগুলো আমাদের দরকার হবে। সাথে ইলেকট্রনিক্স উপকরন সমূহ ব্যবহার করে আমরা সার্কিট নির্মান বা diy প্রজেক্ট তৈরী করতে পারি, তা জানতে পারবো। এগুলো আমাদের ইলেকট্রনিক্স প্রজেক্ট সর্ম্পুকে শেখার পাশাপাশি, ইলেকট্রনিক্স সার্কিটে ট্রাবলশুটিং করতে সাহায্য করবে।
এই টিউটোরিয়াল এর পরবর্তী অধ্যায়ে আমরা ট্রানজিস্টর সম্পর্কে জানব এবং রেজিস্টার কিভাবে কাজ করে থাকে সে সম্পর্কে বিস্তারিত বোঝার জন্য বিভিন্ন ধরনের সার্কিট নির্মাণ করব । সুতরাং এ পর্যন্ত ইলেকট্রনিক্স শেখার জন্য আপনার কৌতুহল এবং আগ্রহ বজায় রাখুন
এই টিউটোরিয়াল সমূহ হাতে-কলমে ইলেকট্রনিক্স শিখি বই এর একটি অংশ। আপনি যদি এই টিউটোরিয়াল গুলো পছন্দ করে থাকেন এবং ইলেকট্রনিক্স সম্পর্কিত বিষয়গুলোকে সহজে হাতে-কলমে শেখার জন্য আরও সিরিয়াস মটিভেশন অনুভব পোষণ করেন , তবে অবশ্যই এই বইটি আপনাকে গুরুত্বপূর্ণভাবে সহযোগিতা করবে । এই বইয়ের সাথে ইলেকট্রনিক্স এর থিওরি এবং হাতে কলমে বিষয় শেখার জন্য বিস্তারিত বিবরণ প্রদান করা হয়েছে । এই বইটা কিভাবে ইলেকট্রনিক প্রজেক্ট ডিজাইন করা যায়, কিভাবে বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করা যায় , সে সম্পর্কে বিস্তারিত নির্দেশনা ধারাবাহিকভাবে দেখানো হয়েছে । অন্যদিকে এই বইয়ের সাথে ইলেকট্রনিক্স উপকরণসমূহ সংযুক্ত আছে ।
এর ফলে বইতে শেখা বিষয় সমূহ ব্যবহার করে সফটওয়্যার এর সার্কিট ডিজাইন করতে পারবেন এবং পরবর্তীতে বইয়ের সাথে যুক্ত উপকরণ সমূহ ব্যবহার করে বাস্তবিক প্রজেক্ট তৈরি করতে পারবেন । এর ফলে ইলেকট্রনিক শেখার জন্য একজন পাঠক সমন্বিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে পারবেন এবং থিওরি ও প্র্যাকটিক্যাল জ্ঞান এর সমন্বয় ঘটনার মাধ্যমে সহজে ইলেকট্রনিক সেখার কার্যক্রম সম্পাদন করতে পারবেন । এর ফলে এই বইটি ব্যবহার করার মাধ্যমে ছাত্ররা সহজে তাদের ক্লাসের ইলেকট্রনিক সম্পর্কিত থিওরি গুলো বুঝতে পারবে এবং সেগুলোর বাস্তব প্রয়োগ সম্পর্কে বিস্তারিত প্র্যাকটিক্যাল ধারণা অর্জন করতে পারবে । অন্যদিকে এই বইটি ব্যবহার করার মাধ্যমে ইলেকট্রনিক্স এর সাথে সম্পর্কিত টেকনিশিয়ান এবং প্রফেশনাল ব্যক্তিরা তাদের ব্যবহারই কাজগুলো কিভাবে সম্পাদিত হয় সে সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারবেন এবং এগুলো তাদেরকে আরো ভালোভাবে সমস্যাগুলো সমাধান করা এবং নতুন কাজের স্কোপ তৈরি করতে সাহায্য করবে । সাথে সাথে ইলেকট্রনিক বিষয়ের প্রতি আগ্রহী হবিষ্ট রা এই বইটি ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের নতুন প্রজেক্ট ডিজাইন এবং সেগুলো নির্মাণ করার সক্ষমতা অর্জন করবেন এবং এগুলো তাদের ইলেকট্রনিক্স শেখার যাত্রাকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবে প্রভাবিত করবে