একটি ভৌতিক বনভূমি থ্রিলার, যেখানে হারিয়ে যাওয়া মানুষদের ফিসফিসানি প্রতিধ্বনিত হয় গাছেদের ভেতর।
মূল - আরাভ কাদকা
অনুবাদ - STEM SCHOOL
বইটির মূল্যঃ ৳130 (একশত ত্রিশ টাকা)
প্রাপ্যতাঃ বইটি ষ্টকে আছে
কিছু বন জীবিত থাকে। কিছু বন মনে রাখে। আর কিছু বন... আপনাকে কখনোই মুক্তি দেয় না।
ভ্যালি অফ দ্য শ্যাডো ট্রিজ উপন্যাসে কুয়াশায় মোড়া বন থেকে এক শীতল ফিসফিসানি ভেসে আসে, যখন একজন অভিজ্ঞ সার্চ-অ্যান্ড-রেসকিউ অফিসার প্রবেশ করেন এক বিস্মৃত জঙ্গলে। হারিয়ে যাওয়া ভ্রমণকারী আর অদৃশ্য হয়ে যাওয়া পথের জন্য কুখ্যাত এই অরণ্য তার রহস্যকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে শতাব্দীর পর শতাব্দী। কিন্তু নতুন এক মামলার সূত্র তাকে নিয়ে যায় সত্যের কাছাকাছি, যেখানে তাকে নিজের অতীতের ছায়ার মুখোমুখি হতে হয়—সেগুলো বাস্তব হোক কিংবা মনের ভেতরের দুঃস্বপ্ন—হারানো মানুষদের খুঁজে পেতে।
যা শুরু হয়েছিল নিয়মিত একটি উদ্ধার অভিযানের মতো, তা দ্রুতই পরিণত হয় এক ভয়াবহ টিকে থাকার সংগ্রামে। এখানে প্রতিটি গাছের ডাল হয়তো কোনো স্মৃতি বহন করছে, আর প্রতিটি প্রতিধ্বনি হয়তো কারও সাহায্যের আর্তনাদ। অতিপ্রাকৃত ভয়ের সঙ্গে মানসিক থ্রিলার মিশে তৈরি হয়েছে এক শ্বাসরুদ্ধকর অভিজ্ঞতা, যা পাঠককে নিয়ে যাবে ভয়, স্মৃতি আর মুক্তির সীমান্তে।
হারিয়ে যান—কিন্তু সেরা উপায়ে।
ভ্যালি অফ দ্য শ্যাডো ট্রিজ আপনাকে বাস্তবতার সীমানায় নিয়ে যাবে এবং সাহস করবে গভীরে তাকাতে প্রলুব্ধ করতে।
এখনই কিনুন এবং আবিষ্কার করুন, আসলে কী লুকিয়ে আছে শিকড়ের নিচে।
পাহাড়ের কোলে বিস্তৃত যে উপত্যকাটির নাম বহু বছর ধরে মানুষ কেবল ফিসফিস করে উচ্চারণ করে এসেছে, সেটি হলো ছায়ার গাছের উপত্যকা। দূর থেকে দেখলে বনটা অন্য সব বনের মতোই মনে হয়—ঘন সবুজে ঢাকা, উঁচু পাইন গাছগুলো যেন আকাশ ছুঁতে চায়, আর বাতাস বয়ে গেলে তাদের মাথা দুলে ওঠে এক অদ্ভুত ছন্দে। কিন্তু যারা এই উপত্যকার কাছে থাকে, তাদের মনে এই বনের নাম শুনলেই এক অজানা শিহরণ বয়ে যায়। তারা বিশ্বাস করে, এই বন মানুষের শরীরকে নয়, মানুষের হৃদয়কে গ্রাস করে। কেউ কেউ বলে, বন এখানে শত্রুর মতো আক্রমণ করে না, বরং এক মায়াবী দুঃখে মানুষকে টেনে নেয়, এমন দুঃখ যা থেকে আর কেউ ফিরে আসতে পারে না।
এই রহস্যের গভীরে প্রবেশ করার দায়িত্ব পড়ল সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ অফিসার জারা নাদিমের ওপর। জারা পেশাগত জীবনে শক্ত মানসিকতার একজন মানুষ। দুর্ঘটনা, হারিয়ে যাওয়া পর্যটক কিংবা দুর্যোগের মুহূর্ত—এসবই তার প্রতিদিনের কাজের অংশ। তাই যখন খবর এলো যে ছায়ার গাছের উপত্যকায় কয়েকজন মানুষ অদৃশ্য হয়ে গেছে, তখন তিনি প্রথমে এটিকে কেবল আরেকটি নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা হিসেবেই ভেবেছিলেন। তার কাছে এসব অলৌকিক গল্প কেবল গ্রামবাসীর কুসংস্কার।
কিন্তু ঘটনাটা মোড় নিল ভিন্ন দিকে, যখন খবর এলো এক ছোট্ট ছেলের হারিয়ে যাওয়ার। তার নাম ইউসুফ। স্কুল থেকে ভ্রমণে গিয়েছিল সে। খেলতে খেলতে হঠাৎ করেই ইউসুফের অস্তিত্ব যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। বন্ধুরা প্রথমে ভেবেছিল সে হয়তো অন্য দলে চলে গেছে, শিক্ষক ভেবেছিলেন হয়তো গাছের আড়ালে লুকিয়েছে। কিন্তু এক ঘণ্টা কেটে গেলেও ইউসুফ কোথাও নেই। চারদিকে খোঁজা হলো, নাম ধরে ডাকা হলো, পাহাড়ি বাতাসের সাথে মিশে গেল শিক্ষকের কণ্ঠ, কিন্তু কোনো সাড়া নেই। যেন বন তার কণ্ঠকেও গ্রাস করে নিল।
গ্রামের মানুষ বলল, "আমরা বলেছিলাম, এই বনের ভেতরে বেশি দূর যেও না। বন দুঃখ দিয়ে ডাকে, আর যে তার ডাকে সাড়া দেয়, সে আর ফিরতে পারে না।"
জারা এসব শুনে ভ্রু কুঁচকালেন। তিনি এমন মানুষ, যিনি কুসংস্কারের পেছনে যুক্তির আলো খুঁজতে চান। তার মনে হলো, হয়তো ইউসুফ কোনো খাদের ধারে গিয়ে পড়েছে, অথবা বুনো জন্তুর ভয়ে কোথাও লুকিয়ে আছে। কিন্তু গভীরে, মনের এক কোণে অদ্ভুত এক প্রশ্নও জেগে উঠল—এত বছর ধরে কেনো এই বনকে ঘিরে মানুষ এমন ভয় লালন করে আসছে?
অফিসে বসে যখন তিনি ইউসুফের নিখোঁজ হওয়ার রিপোর্ট লিখছিলেন, তখন জানালার বাইরের পাইন গাছগুলো বাতাসে দুলছিল। প্রতিটি ডাল থেকে যেন এক অচেনা ফিসফিসানি ভেসে আসছিল। জারা চমকে উঠলেন। হয়তো কল্পনা, হয়তো স্রেফ বাতাসের শব্দ, কিন্তু কেন যেন মনে হলো, গাছগুলো যেন তাকে ডেকে বলছে—“এসো, তুমি যদি সাহসী হও, তবে আমাদের সত্যি আবিষ্কার করো।”
জারা সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি এই রহস্যের সমাধান করবেন। শুধু কর্তব্যবোধ নয়, তার ভেতরে জন্ম নিল অদ্ভুত এক কৌতূহল। যদি সত্যিই বন মানুষের হৃদয়কে বন্দি করে ফেলে, তবে কেন? কীভাবে? আর এই অন্ধকার রহস্যের ভেতর ইউসুফ কোথায় হারিয়ে গেছে?
সেদিন রাত গভীর হলো। চারপাশে নিস্তব্ধতা নেমে এলো, দূরে পাহাড়ি নদীর গর্জন শুনতে পাওয়া যাচ্ছিল। জারা জানতেন, সামনে যে পথ তিনি ধরতে যাচ্ছেন তা সহজ নয়। হয়তো এই বনের গল্পগুলো নিছক কল্পকাহিনি, কিন্তু তার মনের ভেতর অদৃশ্য এক হাত যেন টেনে নিয়ে যাচ্ছিল সেই দিকেই।
এইভাবে শুরু হলো জারা নাদিমের যাত্রা—এক যাত্রা যেখানে নিখোঁজ শিশু ইউসুফের খোঁজ মিলবে কি না তা কেউ জানে না, কিন্তু নিশ্চিতভাবে বলা যায়, এই উপত্যকার রহস্য উন্মোচন করতে গিয়ে জারাকে এমন সত্যের মুখোমুখি হতে হবে, যা শুধু বন নয়, তার নিজের ভেতরের অন্ধকারকেও আলোকিত করবে।
পাইন গাছগুলো যেন এখনো ফিসফিস করে বলছে—“এসো, সত্যিটা জানতে হলে তোমাকেই ভেতরে আসতে হবে।”