গভীর সমুদ্রের অভিশাপ, আত্মা, আর ডুবে থাকা গোপন রহস্যের এক রোমাঞ্চকর অভিযান
মূল - আরাভ কাদকা
অনুবাদ - STEM SCHOOL
বইটির মূল্যঃ ৳100 (একশত টাকা)
প্রাপ্যতাঃ বইটি ষ্টকে আছে
তরঙ্গের নিচে লুকিয়ে আছে এমন এক গোপন রহস্য, যা কখনও জাগানো উচিত নয়।
এক সাহসী তরুণ ডুবুরি যখন এক বিস্মৃত উপকূলের কাছে শতাব্দী পুরনো এক জাহাজডুবির ধ্বংসাবশেষে পা রাখে, তার স্বপ্ন ছিল হারানো ধন খুঁজে বের করা। কিন্তু সেই অনুসন্ধান মুহূর্তেই রূপ নেয় এক ভয়ঙ্কর বেঁচে থাকার সংগ্রামে। প্রাচীন পান্নার মতো সবুজ পাথরগুলো ঝলমল করে রহস্যময় আলোয়, আর সেই আলো জাগিয়ে তোলে এক প্রতিশোধপরায়ণ সমুদ্র আত্মাকে—যে শত বছর ধরে সেই ডুবে থাকা জাহাজের সঙ্গে বাঁধা।
জোয়ারের স্রোত বাড়তে থাকে, বাস্তবতা ধীরে ধীরে ভেঙে যেতে থাকে, আর ডুবুরি বুঝতে পারে মুক্তি পেতে হলে তাকে উন্মোচন করতে হবে সেই জাহাজের করুণ অতীত—অন্যথায় সেও হয়ে উঠবে সেই অভিশপ্ত কিংবদন্তিরই এক অংশ।
Emerald Bones হলো সমুদ্র-রহস্য, অতিপ্রাকৃত থ্রিলার, আর গভীর জলের অজানা ভয়ের এক নিখুঁত সংমিশ্রণ। লেখক আরাভ খাড়কার শব্দচিত্র পাঠককে টেনে নিয়ে যায় এমন এক জগতে, যেখানে সমুদ্র শুধু প্রবাল আর মাছের আশ্রয় নয়—এখানে ঘুমিয়ে আছে প্রাচীন ক্রোধ, প্রতিশোধ, আর অমীমাংসিত আত্মাদের গোপন ইতিহাস।
তরঙ্গের তলায় লুকিয়ে থাকা রহস্য উন্মোচন করো। এখনই “Buy Now” ক্লিক করো এবং সাহস থাকলে ডুবে যাও Emerald Bones-এর জগতে।
সমুদ্রের গভীরে নামার আগে রাহুল একবার মুখ তুলে আকাশের দিকে তাকাল। আকাশের রঙ ছিল নীলচে ধূসর, যেন কেউ সমুদ্রের রঙই আকাশে ছিটিয়ে দিয়েছে। বাতাসে লবণের গন্ধ, ঢেউয়ের গর্জন, আর দূরে ভাঙা পাথরের ওপর পড়ে থাকা সাদা ফেনা—সব মিলিয়ে যেন এক অদ্ভুত বিষণ্ণ সুর বয়ে যাচ্ছিল। উপকূলটা ছিল প্রায় জনমানবশূন্য। একটা পুরনো মৎস্যগ্রাম কাছেই, কিন্তু এই প্রান্তে কেউ আসে না। স্থানীয়দের মধ্যে গুঞ্জন আছে—এই জায়গাটা অভিশপ্ত। রাতে নাকি সমুদ্রের বুক থেকে ভেসে আসে হারিয়ে যাওয়া জাহাজের ঘণ্টাধ্বনি, আর নীল আলোয় ভেসে ওঠে ছায়ামূর্তি।
রাহুল এসব কুসংস্কারে বিশ্বাস করত না। সে ছিল পেশাদার ডাইভার—অভিযাত্রী মন আর অজানার প্রতি অদম্য আকর্ষণই ছিল তার জীবনের চালিকা শক্তি। সে জানত, এই উপকূলের নিচে এমন কিছু লুকিয়ে আছে যা যুগ যুগ ধরে মানুষ চোখে দেখেনি। সেদিন সকালে সে যখন নিজের ডাইভিং স্যুট পরছিল, তার মনে হচ্ছিল আজকের দিনটা অন্যরকম কিছু ঘটানোর জন্যই এসেছে।
সে ধীরে ধীরে জলের ভেতর নামল। ঠান্ডা নোনা জল তার গায়ে মিশে গেল, চারপাশটা ক্রমে গাঢ় নীল হয়ে উঠল। কয়েক ফুট নামতেই সূর্যের আলো ক্ষীণ হয়ে এল, আর জলের তলদেশে এক রহস্যময় অন্ধকার ছায়া দেখা দিল। রাহুলের শ্বাসযন্ত্রের হালকা শব্দ ছাড়া চারদিকে নিস্তব্ধতা। সে টর্চটা জ্বালাল, আর আলো পড়তেই সে থমকে গেল। তার চোখের সামনে জেগে উঠেছে এক বিশাল জাহাজের ছায়া—আধা বালির নিচে ডুবে থাকা, কিন্তু তার কাঠামোয় এখনো রাজকীয় মহিমা। যেন বহু শতাব্দী ধরে ঘুমিয়ে থাকা এক দৈত্য, যে জেগে উঠতে চাইছে।
জাহাজের গায়ে শেওলা আর প্রবালের আস্তরণ। কাঠের গায়ে খোদাই করা কিছু চিহ্ন সে দেখতে পেল—যা কোনো পরিচিত ভাষার মতো নয়। এক মুহূর্তের জন্য তার শরীর কেঁপে উঠল। সে ক্যামেরা বের করে ছবি তুলতে শুরু করল, কিন্তু ঠিক তখনই হালকা একটা স্রোত তার চারপাশে ঘুরে এল, যেন কেউ জলের ভেতর নড়ে উঠল। রাহুল পিছনে তাকাল—কিছু নেই। কেবল একরাশ ভেসে থাকা বুদবুদ, আর জলের ভেতর এক অদ্ভুত সুরের প্রতিধ্বনি।
সে গভীরে নামল আরও একটু, জাহাজের মূল ডেকে পৌঁছাতে। সেখানে দেখা গেল ভাঙা মাস্তুল, ছেঁড়া দড়ি, আর কিছু কাচের বোতল—যেগুলোর ভেতর এখনো কিছু তরল আটকে আছে। সে একটার গায়ে হাত দিতে গিয়ে থেমে গেল। বোতলের ভেতরে একটা ক্ষীণ আলো জ্বলছে, যেন কোনো জীবন্ত কিছু বন্দি রয়েছে সেখানে। রাহুলের বুক ধুকপুক করতে লাগল, কিন্তু কৌতূহল তাকে থামাতে পারল না। সে বোতলটা তুলে নিতেই চারপাশের জল যেন হঠাৎ কেঁপে উঠল।
দূরে কোথাও একটা ঘণ্টার আওয়াজ ভেসে এল—স্পষ্ট, গভীর, আর ভয়ংকরভাবে মানবীয়। রাহুলের শ্বাসরোধ হয়ে গেল। তার চোখের সামনে জাহাজের ছায়াটা যেন একটু নড়ে উঠল। টর্চের আলোয় হঠাৎ সে দেখতে পেল—ডেকের এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে এক অস্পষ্ট অবয়ব, পুরনো নাবিকের পোশাক পরা, মুখটা আধো অন্ধকারে ঢাকা, কিন্তু চোখ দুটো জ্বলছে যেন গভীর দুঃখে ভরা আগুনের মতো।
রাহুল এক মুহূর্তের জন্য স্থির হয়ে গেল, ঠিক বুঝতে পারল না সে যা দেখছে তা বাস্তব নাকি কোনো জলের খেলা। অবয়বটা ধীরে ধীরে তার দিকে তাকাল, তারপর মিলিয়ে গেল স্রোতের ভেতর। রাহুলের হাত কাঁপছিল, সে বোতলটা শক্ত করে ধরে তীরের দিকে সাঁতরাতে শুরু করল।
তীরে পৌঁছে যখন সে মুখে অক্সিজেন মাস্ক খুলল, তখন সূর্য অস্ত যাচ্ছিল। জলের ওপর ছড়িয়ে পড়েছিল লাল আভা, যেন রক্তমাখা আকাশের প্রতিবিম্ব। রাহুল বোতলটার দিকে তাকাল—ভেতরের আলোটা এখনো জ্বলছে। তার মনে হল, সে হয়তো এমন কিছু নিয়ে এসেছে সমুদ্রের নিচ থেকে যা মানুষের চোখে দেখা ঠিক নয়।
রাতটা সে উপকূলের কাছের একটা পুরনো কাঠের ঘরে কাটাল। বাইরে ঢেউয়ের গর্জন থামেনি। মাঝে মাঝে বোতলের ভেতর থেকে মৃদু আলো বেরিয়ে ঘরের দেয়ালে ছায়া ফেলছিল। রাহুল জানত না, এই আবিষ্কার তার জীবনের গতিপথ বদলে দেবে।
সমুদ্রের নীচে যে ছায়া সে রেখে এসেছে, তা কেবল হারানো এক জাহাজের নয়—সেটা ছিল এমন এক অতীতের প্রতিধ্বনি, যা আবার জেগে উঠতে চায়।
আর সেই রাতেই, অনেক দূরে সমুদ্রের মাঝখানে, কোথাও একটা ঘণ্টা আবার বাজল—দীর্ঘ, বিষণ্ণ, আর ভয়ঙ্করভাবে আহ্বানমূলক।
অধ্যায়টি এখানেই শেষ হয়, কিন্তু রহস্য শুরু হল ঠিক এখনই—যখন হারানো উপকূলের ছায়া ধীরে ধীরে রাহুলের জীবনে প্রবেশ করতে শুরু করল।