এই টিউটোরিয়ালে আমরা ট্রানজিস্টর নামক একটি শক্তিশালী ইলেকট্রনিক কম্পনেন্ট সম্পর্কে জানব এবং এটি ব্যবহার করে কিভাবে সার্কিট নির্মাণ করতে হয় সে সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা লাভ করব । আমরা এখানে জানব কিভাবে কোন একটি সিগন্যাল কে ট্রাঞ্জিষ্টর এমপ্লিফাই করতে পারে এবং সাথে সাথে ট্রানজিস্টর ব্যবহার করে কিভাবে সার্কিটের বিভিন্ন অংশ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় । ট্রানজিস্টর এর সাথে যে সকল জটিল থিওরি সমূহ আছে সেগুলোকে একপাশে রেখে আমরা সহজভাবে ট্রানজিস্টরের কার্যক্রম হাতে কলমে বোঝার জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করব
সার্কিট নির্মাণের জন্য উপকরণ
এই সার্কিট নির্মাণ করার জন্য আমাদের নিম্নলিখিত উপকরণসমূহ প্রয়োজন
ব্রেড বোর্ড
জাম্পার তার
এনপিএন ট্রানজিস্টর যেমন 2N2222 বা 2N2222A বা 2N3904
বিভিন্ন মানের রেজিস্টার
এল ই ডি
পাওয়ার সাপ্লাই
মাল্টিমিটার ( থাকলে সুবিধা হবে)
এল ই ডি
জাম্পার তার
ব্যাটারি
রেজিষ্টর
ব্রেডবোর্ড
ক্যাপাসিটর
ট্রানজিষ্টর
ট্রানজিস্টর কি?
ট্রানজিসটর হচ্ছে সেমিকন্ডাক্টর দিয়ে নির্মিত একটি ডিভাইস যেটি সার্কিটে সুইচের মতো কাজ করে এবং সাথে সাথে এটি সার্কিটের অভ্যন্তরে বিদ্যুত প্রবাহ নিয়ন্ত্রন করতে পারে। আমরা সবাই পানির ট্যাপ দেখেছি। ট্যাপের সাহায্য যেভাবে পাইপের ভিতরের পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রন করা যায়, তেমনিভাবে ট্রানজিসটর সার্কিটের অভ্যন্তরে বিদ্যুত প্রবাহ নিয়ন্ত্রন করতে পারে। আমরা আমাদের চারপাশে যতধরনের ইলেকট্রনিক্স সার্কিট দেখি তাদের প্রায় সবগুলোতেই ট্রানজিসটর আছে। কারন ট্রানজিসটর ইলেকট্রনিক্স জগতে অতি জনপ্রিয় একটি পার্টস।
ট্রানজিস্টর কিভাবে কাজ করে থাকে সেটি বোঝার জন্য আমরা একটি ছোট সার্কিট নির্মাণ করবো । তবে এই সার্কিটটি নির্মাণ করার পূর্বে আমরা ট্রানজিস্টরকে পর্যবেক্ষণ করবো । ট্রানজিস্টরকে সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করলে আমরা দেখতে পাবো যে এর তিনটি পা রয়েছে এবং সাথে সাথে একটি হেড বা মাথা রয়েছে । এই মাথার একটি অংশ বাঁকানো এবং অন্য অংশটি সমান । ট্রানজিস্টরের তিনটি পা তিন ধরনের কাজ করে থাকে এবং কোন পা কোন কাজ করে থাকে সেটি বোঝার জন্য , ট্রানজিস্টর এর হেডের সমান অংশকে উপরের দিকে রাখতে হবে । এজন্য নিচের ছবির মত করে ট্রানজিস্টরকে রাখতে হবে
এরপরে সর্ব বাম দিকের পা এর নাম হবে এমিটার, মধ্যবর্তী পায়ের নাম হবে বেস এবং সর্ব ডানের পায়ের নাম হবে কালেক্টর। সার্কিটে ট্রানজিস্টর এর জন্য নিচের চিহ্ন ব্যবহার করা হয় এবং আমরা দেখতে পাবো যে এখানে তিনটি পায়ের চিহ্ন দেখানো হয়েছে ।
ট্রানজিষ্টর দিয়ে সার্কিট নির্মাণ
সার্কিট নির্মাণ করার জন্য ট্রানজিস্টরকে আমরা নিচের চিত্র এর মত ব্রেড বোর্ডে স্থাপন করি
এরপর ট্রানজিস্টর এর যে কালেক্টর নামক পা আছে, তার সাথে রেজিষ্টর সংযুক্ত করি। রেজিষ্টর এর অপর প্রান্ত পজেটিভ পিনের সাথে সংযুক্ত করি। এমিটার নামক পায়ের সাথে এল ই ডি এর পজেটিভ প্রান্ত সংযোগ করি।
এল ই ডি এর অপর নেগেটিভ প্রান্ত এর সাথে ক্যাপাসিটর এর নেগেটিভ পিনের সাথে সংযোগ করি। এই পিনের সাথে ব্যাটারীর নেগেটিভ প্রান্ত সংযোগ করি।
ক্যাপাসিটরের পজেটিভ প্রান্ত কালেক্টর পিনের সাথে সংযোগ করি।
এবার বেইজ পিনের সাথে রেজিষ্টর যোগ করি। রেজিষ্টরের অপর প্রান্ত এ সিগন্যাল প্রেরণের জন্য জাম্পার তার ব্যবহার করে পজেটিভ সিগন্যাল প্রেরণ করি। দেখা যাবে এল ই ডি টি জ্বলে উঠেছে। এরপর সার্কিট এর বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করি এবং ট্রানজিস্টর এর বেইজ নামক পা তে ছোট ভোল্টেজ সিগন্যাল প্রেরণ করি । এর ফলে এই ছোট সিগন্যালটি ট্রানজিস্টর এর ভিতর একটি সুইচ হিসেবে কাজ করে থাকে এবং এর ফলে ট্রানজিস্টর এর কালেক্টর নামক পা থেকে এমিটার নামক পা এর দিকে বিদ্যুৎ প্রবাহ শুরু হয় । এর ফলে ট্রানজিস্টর এর অভ্যন্তরে বিদ্যুৎ এর প্রবাহ বৃদ্ধি পায় এবং এটি এলইডি কে চলতে সাহায্য করে
ট্রানজিষ্টর সার্কিট
রেজিষ্টর সংযোগ
এল ই ডি সংযোগ
ক্যাপাসিটর সংযোগ
তার সংযোগ
বেইজে সিগন্যাল প্রেরন
এর ফলে আমরা ট্রানজিস্টর এর সিগন্যাল এমপ্লিফিকেশন এর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে পারি এবং বুঝতে পারি যে এর পেইজ নামক পা তে সামান্য সিগন্যাল দেয়া হলে, বেশি পরিমাণে বিদ্যুৎ এমপ্লিফাই হয়ে তা কালেক্টর নামক পা থেকে এমিটার নামক পা এর দিকে প্রবাহিত হয় । সাথে সাথে আমরা আরো বুঝতে পারি যে , ট্রানজিস্টর কে একটি সুইচিং উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা যায় এবং এর বেস নামক পাতে সিগন্যাল প্রেরণ করার মাধ্যমে , এমিটার এবং কালেক্টর নামক পা এর মধ্য বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপন করা যায় । এর মাধ্যমে আমরা ট্রানজিস্টর এর বৈশিষ্ট্য প্রাথমিকভাবে বুঝতে পারি । তবে ট্রানজিস্টর কি কারণে এই আচরণ প্রদর্শন করে সে বিষয়টি বোঝার জন্য আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব
ট্রানজিষ্টর কিভাবে কাজ করে
ট্রাঞ্জিষ্টর এর ভিতরে কার্যক্রম সমূহ কিভাবে সম্পাদন করা হয় সেটি বোঝার জন্য নিচের ডায়াগ্রাম ব্যবহার করা হয়েছে । এই ডায়াগ্রামে পানির প্রবাহের সাথে ট্রানজিসটরের অভ্যন্তরে বিদ্যুত প্রবাহের তুলনামুলক চিত্র আকা হয়েছে।
এই চিত্র পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় যে এখানে পানি প্রবেশ করার জন্য একটি পাইপলাইন আছে এই পাইপ এর ভিতর দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে পারে। এখানে পানি প্রবেশ করার জন্য দুটি পথ আছে এবং এই পথ দুটিকে এ এবং বি চিহ্ন দ্বারা চিত্রিত করা হয়েছে । সাথে সাথে পানি বের হয়ে যাবার জন্য আরেকটি পয়েন্ট আছে যাকে সি চিহ্ন দ্বারা চিত্রিত করা হয়েছে । এই এই এ , বি এবং সি পয়েন্ট গুলোকে ট্রানজিস্টর এর তিনটি পিন যথাক্রমে বেইজ , কালেক্টর এবং এমিটার দ্বারা চিহ্নিত করা যাবে ।
এখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে পানি উপর থেকে নিচে যাবার পথে একটি গেট ডি আছে। এই গেটের সাথে স্প্রিং যুক্ত আছে। স্প্রিং এই গেটকে টেনে খুলতে চায়। কিন্তু গেটের নিচে আরেকটি গেট এফ আছে যা ছোট পাশের পাইপের সাথে যুক্ত আছে। এই গেট, উপরের গেটকে চাপ দিয়ে বন্ধ করে রাখে। এই গেটের সাথে যে স্প্রিং আছে তা একটি কম্প্রেস স্প্রিং। এই স্প্রিং গেটকে চেপে বন্ধ রাখতে চায়। এর কারনে গেটটি সাধারনভাবে বন্ধ থাকে এবং পাইপ দিয়ে কোন পানি প্রবেশ করেনা।
যখন ছোট পাইপের ভিতর দিয়ে এমন পরিমান পানি প্রবাহিত করানো হয় যা স্প্রিং এর চাপকে অগ্রাহ্য করে এফ গেট খুলতে পারে, তবে এটি গেট খুলে ফেলবে। যখন নিচের গেট সামান্য খুলে যাবে তখন উপরের গেট ডি স্প্রিং এর টানে নিচে নেমে আসবে এবং পানি পাইপের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হবে। নিচের ছোট এফ গেটে যত বেশি পানির চাপ দেয়া হবে উপরের ডি গেট তত বেশি খুলে যাবে এবং ততবেশী পানি প্রবেশ করবে। এভাবে নিচে পাশের গেটে পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে উপরের গেট দিয়ে কি পরিমান পানি প্রবাহিত হবে তা নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হবে।
এখানে যে চিত্র বর্ণনা করা হয়েছে , সেটি মূলত ট্রানজিস্টরের একটি মেকানিক্যাল মডেল এবং ট্রানজিস্টরের অভ্যন্তরে একই রকম ভাবে বেইজ নামক পাতে সামান্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলে , আরো অধিক পরিমাণে বিদ্যুৎ কালেক্টর থেকে এ মিটার এর মধ্য প্রবেশ করে থাকে । এই বিষয়টি এনপিএন ট্রানজিস্টর এর জন্য সঠিক হিসাবে বিবেচিত হয় এবং এভাবে ট্রানজিস্টর একটি সুইচ হিসেবে বা সিগন্যাল এমপ্লিফাইং কম্পনেন্ট হিসাবে কাজ করতে পারে।
ট্রানজিষ্টর ব্যবহার করে আমরা ইতিপূর্ যে সার্কিট নির্মাণ করেছি , সেখানে রেজিস্টর এর মান আমরা পরিবর্তন করি । এই রেজিস্টার এর মান পরিবর্তন করার ফলে এলইডি এর জলা এর ক্ষেত্রে কোন ধরনের পরিবর্তন দেখা যায় সে সম্পর্কে তথ্য লিপিবদ্ধ করি
এই টিউটোরিয়ালে আমরা এন পি এন ট্রানজিস্টর এর সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে বেসিক ধারণা লাভ করেছি এবং এগুলোকে কিভাবে সার্কিটে ব্যবহার করা সম্ভব হয় সে সম্পর্কে হাতে-কলমে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি । এর মাধ্যমে ট্রানজিস্টরকে কিভাবে একটি সিগন্যাল এমপ্লিফাইং কম্পনেন্ট এর পাশাপাশি সুইচ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে , সে সম্পর্কে বিস্তারিত অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে । এই বিষয়ে সমূহ ব্যবহার করার মাধ্যমে আমরা পরবর্তী টিউটোরিয়াল সমূহ তে বিভিন্ন ধরনের প্র্যাকটিক্যাল সার্কিট নির্মাণ করতে পারব এবং এর মাধ্যমে আমরা ইলেকট্রনিক্স থিওরি সম্পর্কিত বিষয় সমূহকে হাতে-কলমে ব্যবহার করার জন্য পদক্ষেপ নিতে পারব। ইলেকট্রনিক্স শিক্ষা গ্রহন করা এবং ইলেকট্রনিক্স বেসিক জানার জন্য এগুলো আমাদের দরকার হবে। সাথে ইলেকট্রনিক্স উপকরন সমূহ ব্যবহার করে আমরা সার্কিট নির্মান বা diy প্রজেক্ট তৈরী করতে পারি, তা জানতে পারবো। এগুলো আমাদের ইলেকট্রনিক্স প্রজেক্ট সর্ম্পুকে শেখার পাশাপাশি, ইলেকট্রনিক্স সার্কিটে ট্রাবলশুটিং করতে সাহায্য করবে।
এই টিউটোরিয়াল সমূহ হাতে-কলমে ইলেকট্রনিক্স শিখি বই এর একটি অংশ। আপনি যদি এই টিউটোরিয়াল গুলো পছন্দ করে থাকেন এবং ইলেকট্রনিক্স সম্পর্কিত বিষয়গুলোকে সহজে হাতে-কলমে শেখার জন্য আরও সিরিয়াস মটিভেশন অনুভব পোষণ করেন , তবে অবশ্যই এই বইটি আপনাকে গুরুত্বপূর্ণভাবে সহযোগিতা করবে । এই বইয়ের সাথে ইলেকট্রনিক্স এর থিওরি এবং হাতে কলমে বিষয় শেখার জন্য বিস্তারিত বিবরণ প্রদান করা হয়েছে । এই বইটা কিভাবে ইলেকট্রনিক প্রজেক্ট ডিজাইন করা যায়, কিভাবে বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করা যায় , সে সম্পর্কে বিস্তারিত নির্দেশনা ধারাবাহিকভাবে দেখানো হয়েছে । অন্যদিকে এই বইয়ের সাথে ইলেকট্রনিক্স উপকরণসমূহ সংযুক্ত আছে ।
এর ফলে বইতে শেখা বিষয় সমূহ ব্যবহার করে সফটওয়্যার এর সার্কিট ডিজাইন করতে পারবেন এবং পরবর্তীতে বইয়ের সাথে যুক্ত উপকরণ সমূহ ব্যবহার করে বাস্তবিক প্রজেক্ট তৈরি করতে পারবেন । এর ফলে ইলেকট্রনিক শেখার জন্য একজন পাঠক সমন্বিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে পারবেন এবং থিওরি ও প্র্যাকটিক্যাল জ্ঞান এর সমন্বয় ঘটনার মাধ্যমে সহজে ইলেকট্রনিক সেখার কার্যক্রম সম্পাদন করতে পারবেন । এর ফলে এই বইটি ব্যবহার করার মাধ্যমে ছাত্ররা সহজে তাদের ক্লাসের ইলেকট্রনিক সম্পর্কিত থিওরি গুলো বুঝতে পারবে এবং সেগুলোর বাস্তব প্রয়োগ সম্পর্কে বিস্তারিত প্র্যাকটিক্যাল ধারণা অর্জন করতে পারবে । অন্যদিকে এই বইটি ব্যবহার করার মাধ্যমে ইলেকট্রনিক্স এর সাথে সম্পর্কিত টেকনিশিয়ান এবং প্রফেশনাল ব্যক্তিরা তাদের ব্যবহারই কাজগুলো কিভাবে সম্পাদিত হয় সে সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারবেন এবং এগুলো তাদেরকে আরো ভালোভাবে সমস্যাগুলো সমাধান করা এবং নতুন কাজের স্কোপ তৈরি করতে সাহায্য করবে । সাথে সাথে ইলেকট্রনিক বিষয়ের প্রতি আগ্রহী হবিষ্ট রা এই বইটি ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের নতুন প্রজেক্ট ডিজাইন এবং সেগুলো নির্মাণ করার সক্ষমতা অর্জন করবেন এবং এগুলো তাদের ইলেকট্রনিক্স শেখার যাত্রাকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবে প্রভাবিত করবে